হাঁসের রচনা | ১০০০+ শব্দের সকল শ্রেণীর জন্য উপযোগী

হাসের রচনা

                          হাঁসের রচনাঃ

ভূমিকাঃ হাঁস একটি গৃহপালিত প্রানী, এটি পালন করে অল্প খরচে বেশী লাভ করা সম্ভব। হাস পালনের জন্য অতিরিক্ত খাদ্য এবং জায়গা এবং পরিচর্যা করার জন্য লোকবলের ও প্রয়োজন হয়না। হাঁস ২ প্রকারের পাতিহাঁস ও রাজাহাঁস। হাঁস পালনের মাধ্যমেই নিম্ন আয়ের সংসার গুলো এর মাধ্যমে টিকে থাকে। তাই আমাদের উচিত বাংলার সব ঘরে ঘরে অল্পসংখ্যক হলেও কিছু হাস পালন করা এতে আমাদের অর্থের এবং মাংসের দুটোরই অভাব দূর করবে।

 হাঁসের আবাসস্থলঃ

হাঁসের ঘর মজবুত হতে হবে। ঘরটি খোলামেলা ও আলো-বাতাস চলাচলের স্থানে তৈরি করা ভালো। হাঁসের ঘরের চারদিকে উঁচু বেড়া দিতে পারলে ভালো হয়; যাতে ঝড় বা বৃষ্টিতে কোনো ক্ষতি না হয়।
হাঁসের ঘরে রাতে কুকুর, শেয়াল বা বন বিড়াল হানা দিলে হাঁস ভীষণভাবে ভয় পায় এবং তাতে ডিম পাড়া কমে যায়।

 এমনকি হাঁস ডিম পাড়া সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয় এবং স্বাস্থ্যও খারাপ হয়ে যায়। হাঁসের ঘরের উপরে টিন ব্যবহার করা যায়। ঘরের বেড়া বাঁশের চাটাই দিয়ে করা যায়। হাঁসের ঘরের উচ্চতা ৪-৫ ফুটের বেশি হওয়া উচিত নয়। কেননা তাতে শুধু খরচই বাড়বে। ঘরের মেঝে শুকনা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ রাতভর হাঁস যে মলত্যাগ করে তাতে মাটির ভেজা মেঝে হলে তা পরিষ্কার করা খুব অসুবিধাজনক।

প্রাপ্তবয়স্ক একটি হাঁসের জন্য ৪ বর্গফুট জায়গা প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই হিসেবে ৪০ থেকে ৫০টি হাঁসের জন্য ৫ ফুট উচ্চতা এবং ২০ ফুট গুন ১৬ ফুট চওড়া করে একটি ঘর নির্মান করলেই হবে। হাস খুব চালাক প্রানী না হলেও এরা এক জায়গায় গুটিসুটি হয়ে বেশসময় ধরে থাকতে পারেনা তাই এরা এক জায়গার মদ্যেই ঘোরাফেরা করে, এতে হাসের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সাস্থ ভালো থাকে।

হাঁস পালনের গুরুত্বঃ

হাঁস উভচর প্রাণী, বর্ষার সময় বৃষ্টির পানিতে বাড়ির আশপাশ, খাল, ডোবা, নালা, বিল সব পানিতে ভরপুর হয়ে যায়। তাই এ সময় খুব লাভজনকভাবে হাঁস পালন করা যায়। হাঁস পালনের গুরুত্ব সম্পর্কে নিচে বর্ণনা করা হলোঃ ১। পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে বাড়ির উঠোনের এককোণে দুটো চৌবাচ্চা করে একটিতে হাঁস রাখা যায় এবং অন্যটিতে খুদি
পানা, সুজিপানা, তেঁতুল পানা ও গুগলি শামুক চাষ করা যায়। চৌবাচ্চাতে এগুলো দ্রুত বাড়ে, যা হাঁসের প্রিয় খাদ্য।

২। বাড়িতে তরিতরকারির ও খাদ্যের উচ্ছিষ্ট একত্রে জ্বাল দিয়ে হাঁসের জন্য ভালো খাদ্য তৈরি করা যায়।
৩। হাঁসের ডিম মুরগির ডিম অপেক্ষা বড় এবং পুষ্টি উপাদান ১০-১৫ গ্রাম বেশি থাকে। হাঁসের মাংসে যথেষ্ট আমিষ ও রয়েছে।
৪। হাঁসেও মুরগির ন্যায় ডিম বেশি দেয়। বিশেষ করে দ্বিতীয় বছরে ডিম উৎপাদনের হার বেশি হয়।
৫। হাঁসের শুধু প্লেগ ও কলেরা রোগের প্রতিষেধক দিলে এবং খামার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখলে রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা প্রায়ই থাকে না।

৬। হাঁসের ঘর তৈরিতে মুরগির ঘরের তুলনায় খরচ কম, পরিচর্যা খরচ কম এবং রোগবালাই ও কম।
৭। হাঁস ও মাছ একত্রে চাষ করা লাভজনক। মাছের বর্জিত অংশ বিশেষ করে চিংড়ির বর্জিত অংশের সাথে কিছু কুঁড়া ও গম মিশিয়ে দিলে হাঁসের ভালো খাদ্য হয়। জলাশয়ে হাঁসের বিষ্ঠা মাছের ভালো খাদ্য।

৮।ধান খেতে মাছ ও হাঁস চাষ করা যায়। ধানের জমিতে জন্মানো শেওলা, আগাছা ও পোকামাকড় হাঁসে খায় এবং জমিতে বিষ্ঠা ত্যাগ করায় তা সার হিসেবে কাজে লাগে। হাঁস চলাফেরা করায় মাছ দৌড়াদৌড়ি করে। ফলে মাছ দ্রুত বাড়ে। ধান খেতে বিষ প্রয়োগ করতে হয় না।

৯। ধানের জমিতে হাঁসে মাটি কাদা করায় গাছের বৃদ্ধি ভালো হয় এবং ঘাস পচে মাছের খাদ্য তৈরি হয়।
১০। হাঁস পালনে পানিতে ছাড়ার ফলে তার চাহিদার অর্ধেক খাবার সেখান হতে সংগ্রহ করে থাকে। আর বাকি অর্ধেক খাবার সরবরাহ করেই তাকে পালন করা যায়।
১১। হাঁস যথেষ্ট কষ্ট সহিষ্ণু এবং রাজহাঁসকে নিরাপত্তার কাজেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
১২। হাঁসের পালক কুটির শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

১৩। মুরগির ক্ষেত্রে খাদ্য সরবরাহে তারতম্য হলেই ডিম দেওয়া কমে যায়। কিন্তু হাঁসের ক্ষেত্রে হয় না।
১৪। হাঁসের জন্য জলাশয়ের উপর এক পাশে ঘর তৈরি করা যেতে পারে।
১৫। একটি হাঁস প্রতি মাসে ৩-৪ কেজি জৈব সার পুকুরে দিয়ে থাকে এবং এরূপ ৩-৪টি হাঁসের জৈব সার (বিষ্ঠা) থেকে ১ কেজি বাড়তি মাছ উৎপাদন হতে পারে।

১৬। হাঁসের বিষ্ঠার সাহায্যে তৈরিকৃত বায়োগ্যাসে খরচ কম পড়ে।
১৭। আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হতে পারে। অবসর সময়ে বা বেকার ও দুঃস্থ লোকজন হাঁস পালনের মাধ্যমে আয় করতে পারে। এতে মাংস ও ডিম পুষ্টি চাহিদাও পূরণ করতে পারে।

হাঁস পালনে খাদ্যঃ

হাঁসের বয়স ও জাতবিশেষে খাদ্যের মান, খাদ্যে মিশ্রিত উপকরণ ও খাদ্যের পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণত ৬ মাস পর্যন্ত প্রতি হাঁসের জন্য ১৫ কেজি এবং ৬ মাস পর প্রতিটি হাঁসের জন্য প্রতিদিন ১৬০ গ্রাম হিসেবে ৬ মাসে প্রায় ২৯ কেজি খাবার দরকার হয়।

হাঁসকে জলাশয়ে চরে বেড়াতে দিলে জলাশয়ের অবাঞ্ছিত আগাছা খেয়ে মাছ চাষে সহায়তা করে। জলাশয়ে অবস্থিত শামুক, ব্যাঙাচি, পোকা-মাকড় ইত্যাদি যা মাছের কোনো উপকারে আসে না সেগুলো হাঁস খেয়ে ডিম উৎপাদন করে এবং
শারীরিক বৃদ্ধিও দ্রুততার সাথে হয়ে থাকে।

বাজারে হাঁসের জন্য বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি খাবার কিনতে পাওয়া যায়, এগুলো হাঁসকে খাওয়ানো যেতে পারে। তবে কখনো হাঁসকে শুকনো খাবার না দিয়ে তা ভিজিয়ে দেওয়া উচিত। ডিম পাড়া হাঁসের জন্য খাদ্যে ১৭-১৮% আমিষ এবং বাচ্চা হাঁসের ক্ষেত্রে ২২% আমিষ থাকা উচিত।

হাঁস দানা, খৈল, ভুসি, ঝিনুকের গুঁড়া, ডিমের খোসা চূর্ণ, কেঁচোসহ অন্যান্য খাবার বেশি পছন্দ করে।
হাঁস ঘেরার মধ্যে আবদ্ধ অবস্থায় পালন করতে পুরো খাবারই বাহির থেকে সরবরাহ করতে হয়। ডিম পাড়া এবং খাকি ক্যাম্পবেল জাতীয় হাঁসকে ৮ সপ্তাহের জন্য হাঁস প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ কেজি সুষম খাদ্য এবং পরবর্তী ২০ সপ্তাহ পর্যন্ত হাঁস প্রতি সপ্তাহে ১২.৫ কেজি সুষম খাদ্য দিতে হবে।

খাঁকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসের দৈনিক খাবার দেওয়ার হার নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
০ – ৪ সপ্তাহঃ দৈনিক ৪ বার
৪-৮ সপ্তাহঃ দৈনিক ৩ বার
৮ সপ্তাহের পরঃ দৈনিক ২ বার

হাঁস পালনে হাঁসের রোগ ব্যবস্থাপনাঃ

হাঁসের সাধারণত রোগ বালাই কম হলেও কখনো হাঁসের ঝাঁকে রোগ জীবাণু প্রবেশ করলে এক সাথে অনেক হাঁস মারা যেতে পারে। প্রতিরোধক হিসেবে তাই হাঁসকে নিয়মিত টিকা দেওয়া উচিত। হাঁসের অনেক রোগের মধ্যে দুটি রোগ খুব বেশি মারাত্মক।

রোগ ২টি হলোঃ ডাক প্লেগ ও ডাক কলেরা। এছাড়া খাদ্যে বিষক্রিয়াজনিত রোগ যেমন- আফলাটক্সিন ও বটুলিজম এর কারণেও হাঁস মারা যেতে পারে।
রোগের প্রকৃতি অনুসারে হাঁসের সমস্ত রোগ প্রধানত ২ ভাগে বিভক্ত করা যায় সেগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
১। সংক্রামক
২। অসংক্রামক

তবে রোগের কারণ অনুসারে হাঁসের রোগগুলোকে আরো কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।
 যেমনঃ ১। ভাইরাসঘটিত
২। ব্যাকটেরিয়া ঘটিত
৩। ছত্রাকজনিত
৪। প্রোটোজোয়াজনিত
৫। পরজীবীজনিত
৬। অপুষ্টিজনিত
৭।অভ্যাসজনিত রোগ।

হাঁস রোগাক্রান্ত হলে যে ধরনের লক্ষণসমূহ দেখা যায়ঃ

১। মাথা নিচের দিকে ঝুঁকে পড়তে পারে।
২। নাক, চোখ দিয়ে সর্দি ঝরতে পারে।
৩। চোখে ময়লা জমে থাকতে পারে।
৪। চুপচাপ বসে ঝিমাতে পারে, ডিম পাড়া অবস্থা হতে ডিম কমে যায়, ডিমের আকার পরিবর্তন হয়।
৫।  হা করে নিঃশ্বাস নেওয়া ও গলার মধ্যে শব্দ হতে পারে।
৬। ক্ষুধামান্দ্য, নরম খাবারে অনীহা, পিপাসা বৃদ্ধি ইত্যাদি হতে পারে।
৭। ডায়রিয়া, খুড়িয়ে হাঁটা, মলদ্বারা বিষ্ঠা লেপ্টে থাকা, হাঁপানো ইত্যাদি দেখা দেয়।

উপসংহারঃ

হাস পালনে আর্থিকভাবে সাবলম্বি হওয়া যায় এবং অন্যদিকে আমাদের খাদ্য তালিকার আমিষের ঘাটতি পূরন করা যায়। গ্রামেগঞ্জে মহিলারা প্রত্যেক ঘরে ঘরে হাস পালন করে থাকে। আমাদের প্রত্যেকের উচিত এই প্রানিকে পালন করার ব্যাপারে সকলকে উৎসাহিত করা।

Post a Comment

0 Comments

Close Menu